কক্সবাজার জার্নাল ডটকম :
পুলিশের অভ্যন্তরীণ ও প্রশাসনিক সংস্কারসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরেছেন পুলিশ সদস্যরা।
বুধবার (৭ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এই দাবিসমূহ তুলে ধরা হয়।
পুলিশ সদস্যদের দাবিসমূহ নিম্নরুপ:
১) পুলিশকে দ্রুততম সময়ে স্বতন্ত্র, বৈষম্যমুক্ত, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত এবং শতভাগ পেশাদারীত্ব ও জবাবদিহিতামূলক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত সকল পদের সদস্যদের জরুরি ভিত্তিতে বি-রাজনীতিকরণ করার অংশ হিসেবে জনসম্পৃক্ত ডিউটি থেকে সরিয়ে নিয়ে কঠোর মনিটরিংয়ে রাখতে হবে। বিগত দিনে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করত, পোস্টিং বাণিজ্যসহ সকল দুর্নীতিবাজদের তালিকা করে তাদেরকে উপযুক্ত বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পুলিশ কেবলমাত্র রাষ্ট্রের প্রতি, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে, কোন রাজনৈতিক দল বা সরকারের পক্ষে নয়।
২) মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে অফিসারদের মূল্যায়ন ও পদায়ন করতে হবে। ফোর্সের সাথে কমান্ডিং অফিসারের আন্তঃযোগাযোগ ও সম্পর্ক কেমন সেটা কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে নিশ্চিত করে ঊর্ধ্বতন অফিসারদের পদোন্নতির শর্ত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে সকল পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে। ইতোমধ্যে যেসব পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে পিআরবি অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তাদের জন্য একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ জুডিসিয়াল কমিটি গঠন পূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে রিভিউ করে প্রকৃত বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যৌক্তিক অভিযোগ জানানোর জন্য কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে।
৩) নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতিতে বৈষম্য দূর করতে হবে। কনস্টেবল এবং এএসপি পদে দুই ধাপে নিয়োগ হবে। কনস্টেবল এর যোগ্যতা হবে কমপক্ষে এইচএসসি পাশ। পদোন্নতির ক্ষেত্রে এএসপি পদে যোগ্যতার ভিত্তিতে ৫০% পদ সংরক্ষণ করতে হবে, বাকি ৫০% পদ সরাসরি নিয়োগ হবে। কনস্টেবল থেকে পরবর্তী পদসমূহে পদোন্নতির ক্ষেত্রে একবার পরীক্ষায় পাশ করলেই শূন্য পদের বিপরীতে পদোন্নতি হবে। পদোন্নতির সাথে সাথে শিক্ষানবিস ঘোষণা করতে হবে। ইন্সপেক্টর বা তদূর্ধ্ব পদে পদোন্নতির জন্য অবশ্যই মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে এবং পুলিশের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় (স্টাফ কলেজে) পুলিশ সংশ্লিষ্ট ডিগ্রির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৪) আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী দিনে ৮ ঘণ্টার ডিউটির শিফট নিশ্চিত করতে হবে। এর অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা হলে নিয়ম অনুযায়ী ওভারটাইম দিতে হবে। সরকারি ছুটির দিনে ডিউটির কর্মঘণ্টাকে ওভারটাইম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এক মাসের বেসিক সমপরিমাণ অর্থ প্রণোদনাসহ বছরে ৩০ দিন বিনোদন ছুটি দিতে হবে।
৫) অধস্থনদেরকে কোন অবৈধ/জনস্বার্থবিরোধী আদেশ পালনে বাধ্য করা যাবে না। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ সদস্যদের হত্যা ও আহত করা, পুলিশী স্থাপনায় হামলা, সরকারী সম্পদ লুট, অগ্নিসংযোগসহ সামগ্রিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচার করতে হবে। আহত-নিহতদের প্রতি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্যান ও স্বীকৃতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রন্থ সদস্যদের পরিবারকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের উপযুক্ত সদস্য থেকে ন্যূনতম একজনকে চাকুরীর ব্যবস্থা করাসহ যৌক্তিক আয়ের বন্দোবস্ত করতে হবে। আহতদের দেশে ও দেশের বাইরে সর্বোচ্চ চিকিৎসা, আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ যে কোন ধরনের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬) সকল পুলিশ সদস্যদের (কনস্টেবল থেকে আইজিপি পর্যন্ত) জন্য বেসিকের ৫০% পুলিশ ভাতার প্রচলন করতে হবে। প্রতি মাসের যাতায়াত ভাতা পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
৭) অবিলম্বে বাংলাদেশ পুলিশে (কনস্টেবল থেকে আইজিপি পর্যন্ত) উন্নত বিশ্বের আদলে দুই ধরনের অফিসিয়াল/অপারেশনাল ও কমব্যাট ইউনিফর্ম চালু করতে হবে। র্যাংক ব্যাজ ব্যতীত কনস্টেবল থেকে আইজিপি পর্যন্ত।
৮) পুলিশের সকল পদমর্যাদার সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় রেখে উপযুক্ত স্থানে পদায়ন করতে হবে। বিশেষ করে আইসিটিসহ যে কোন টেকনিক্যাল জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
৯) পুলিশ সদস্যদের উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। বাধ্যতামূলকভাবে নৈতিকতা ও মানবিক আচরণ বিষয়ক ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নারী, শিশুসহ সকল শ্রেণীর নাগরিকদের সাথে আচরণের উন্নয়নে কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও মনিটরিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। পিআরবি অনুযায়ী সকল পদমর্যাদার অফিসারকে ঊর্ধ্বতন অফিসারগণ প্রাপ্য সম্মান দিয়ে কথা বলবেন।
১০) মাঠ পর্যায়ের পুলিশিংয়ের কেন্দ্রবিন্দু থানার জনবল কাঠামো সর্বোচ্চ সংস্কার ও আধুনিকয়ান করতে হবে; যথাক্রমে আলাদাভাবে পেট্রোলিংসহ আইন-শৃঙ্খলা ডিউটি, ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট, মামলা তদন্ত ও প্রসিকিউশন সংক্রান্ত ডিউটির জন্য বিশেষ ও পর্যাপ্ত যানবাহনসহ আলাদা আলাদা ডিউটি ও কর্মবন্টন করে জনসাধারণের সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
১১) পোস্টিং ও তদবির বাণিজ্য সর্বাত্মকভাবে বন্ধ করতে হবে। সকল পুলিশ হাসপাতালে সেবার আওতা বৃদ্ধি, সকল পদমর্যাদা ও ইউনিটে সমানভাবে প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। আধুনিক লজিস্টিক (কর্ম পরিবেশ, ডরমিটরি, মেস ও পর্যাপ্ত যানবাহন) সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশের গাড়িতেই কেবল পুলিশ ডিউটি করবে। সর্বোপরি চলমান উদ্ভুত পরিস্থিতীতে চরমভাবে অনিরাপদ হয়ে পড়া পুলিশ সদস্যদের যৌক্তিক এ দাবির সাথে সংশ্লিষ্টদের ভবিষ্যতে কোন ধরনের হয়রানী না করার নিশ্চয়তার বিধান করতে হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-